অনেক ছেলেই' আছে যারা 'শুধু প্রেমভালবাসার টানে নয় বরং ফিতনা এড়াতে কিংবা চরিত্র রক্ষার্থে ছাত্রবস্থায় বিয়ে করতে চান কিন্তু পরিবার সম্মত হয় না।
.
প্রথমত আমাদের সমাজে ছাত্রবস্থায় বিয়ে করতে চাওয়া টা বিরাট অপরাধ ধরা হয়। এই অসুস্থ্'য সমাজে' পাত্রীর' অভিভাবক স্বাভাবিক ভাবে কখনই একজন ছাত্র জামাই মেনে নিতে চান না, পাত্রীর অভিভাবক তো অনেক'' পরে, স্বয়ং পাত্রের ''অভিভাবকই ছাত্রবস্থায় ছেলেকে বিয়ে দিতে কোনভাবেই পছন্দ করেন না।
.
আফসোসের বিষয়, যেসব অভিভাবকের দ্বীনের বুঝ আছে, তারা সব জানে বুঝে তবুও এই এক জায়গায় আপত্তি — ছেলেকে ছাত্রাবস্থায় বা চাকরি পাবার আর্লি স্টেজে বিয়ে দিবেন না। এই পোস্টে কেবল ছেলের অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে একজন সন্তান হয়েই, অন্যান্য সন্তানদের পক্ষ থেকে ছোট মুখে বড় কিছু কথা বলার আছে।
.
কারন অভিভাবক সাহায্য করলে বিষয়টা অনেক সহজ হয়ে যায়। আপনারাও পড়াশোনা করেছেন, আমাদের বয়স পার করে এসেছেন, দুনিয়াকে আমাদের থেকে বেশী দেখে এসেছেন আমরা স্বীকার করি এবং আপনাদের অভিজ্ঞতাকে সম্মান করি।
এতে কোন সন্দেহ নাই আপনারা সন্তানের জন্য সব থেকে বেস্ট টা চান, সন্তানের ভালোর জন্য নিজেদের জীবনও উতসর্গ করতে পারেন।
.
কিন্তু এখনকার দুনিয়া আমরা যেভাবে দেখছি আপনাদের তা কল্পনারও বাইরে। এখন আমরা রাস্তায় বের হলেই ফিতনা, ভার্সিটি তে গেলে ফিতনা, ইন্টারনেটে ঢুকলে ফিতনা, ফেসবুকে ঢুকলে ফিতনা। এই অপরাধ গুলো করলে, কেউ সাক্ষী থাকবেনা একমাত্র আল্লাহ ছাড়া, তাই আল্লাহ এর ভয় না থাকলে এই ফিতনা গুলো এড়িয়ে চলা কঠিন না, জাস্ট অসম্ভব।
.
দৃষ্টি সংযত কতদিকে করব? ডান দিকের ফিতনা থেকে দৃষ্টি সরিয়ে বাম দিকে চোখ ঘুরালে বামদিকেও ফিতনা। জৈবিক চাহিদার ব্যাপারটা তো আছেই, এটা লজ্জার কিছু না স্বয়ং আল্লাহ তায়ালারই তা সৃষ্টি, কিন্তু মানসিক চাহিদা ও আধ্যাত্মিক চাহিদার ব্যাপার গুলোও ব্যাপক। বিপরীত লিংগের প্রতি মানুষের আকর্ষন স্বভাবজাত, মূলত জন্মজাত। একটা ছেলে তার যাবতীয় কথা কিন্তু অপর একটা ছেলের থেকে একটা মেয়েকে শেয়ার করতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে এবং এটা স্বাভাবিক, বৈজ্ঞানিক ভাবেও স্বীকৃত, হরমনাল ব্যাপার।
.
আপনার ছেলে ভার্সিটিতে, রাস্তাঘাটে যথাসাধ্য দৃষ্টিসংযত রাখছে, ইন্টারনেটে ঢুকার সময় 'আউজুবিল্লাহি মিনাশ..' — পড়ে ঢুকছে, আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করে এত ভদ্র জীবন যাপন করছে, তাকে কী বিয়ের ব্যাপারে সহযোগিতা করে পথ সহজ করে দেওয়া আপনাদের উচিত নয়? অনেক সময় যে বিয়ের প্রয়োজন বোধ করলেও বলতে লজ্জা বোধ করে, আপনাদেরই উচিত তাকে জিজ্ঞাসা করে ব্যাপারটায় সহজ করে দেওয়া, তা না করলে অন্তত সে নিজে থেকে বলার পর সহজ করে দিন।
.
যে ব্যাক্তি চরিত্র রক্ষার্থে বিয়ে করতে চান, স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা তাকে রিজিক সহ যাবতীয় ব্যাপারে সাহায্য করার ওয়াদা দিচ্ছেন, তাহলে অভিভাবক হয়ে কেন সাহায্যের ওয়াদা দিতে পারেন না? আল্লাহ তায়ালা র ওয়াদা কি যথেষ্ট নয়? আপনি বলতে চাচ্ছেন,চাকরি বাকরি কিছু একটা হোক। তারপর বিয়ে।
.
ওকে ফাইন, কিন্তু লজিক কী? যদি ছেলে বউ এর খাওয়া দাওয়াটাই একমাত্র ফ্যাক্ট হয়, তাহলে আপনারা অবশ্যই স্বীকার করবেন বাড়ির ৩/৪ জন সদস্যের রান্না করা খাবারে আর একজন এক্সট্রা থাকলে আনায়াসে হয়ে যায়। আর তাও যদি আপত্তি থাকে তাহলে নাহয় আপনার ছেলের খাবারের অংশ টুকু সে আর তার বউ ভাগা ভাগি করে খাবে ইনশাআল্লাহ। ছেলেবউ থাকবে স্বামীর ঘরেই, ঘুমোবে স্বামীর বিছানাতেই। কসমেটিক বা প্রাসংগিক কিছু খরচ তো আপনার মেয়ে থাকলে আপনিই করতেনই যথাসাধ্য।
.
আর আপনাকে তো সারাজীবন ছেলে বউ এর দায়িত্ব নিতে বলা হচ্ছেনা, কয়েকটা বছর, বড়জোর ২-৩ বছর। আল্লাহ এর সন্তুষ্টি এবং ছেলের ভালোর জন্য এটা কি খুব কষ্টসাধ্য?
.
যদি খাওয়া দাওয়া ফ্যাক্ট না হয়, ভাবেন যে ছেলের ক্যারিয়ারে এটা প্রতিবন্ধক, তাহলে জেনে রাখুন বিয়েটা ক্যারিয়ারে কোন প্রতিবন্ধক না। বরং সাপোর্টিভ। ছেলের শিক্ষাঙ্গনের উন্মুক্ত পরিবেশ, অবৈধ রিলেশনশিপের ব্যাপকতা ,অশ্লীলতা-বেহায়াপনা এগুলোই বরং ক্যারিয়ারের জন্য প্রতিবন্ধক, বিপজ্জনকও বটে।
.
ছাত্রবস্থায় বিয়ে করে ভালবাসার প্রিয় মানুষটি (স্ত্রী, বউ, জীবনসঙ্গিনী) আপনার সন্তানের কাছে থেকে ক্যারিয়ারের ব্যাপারে যখন উতসাহ দিবে, তখন সে পাবে একমুঠো পবিত্র ভালবাসার হৃদয়স্পর্শী উতসাহ, আর দায়িত্বশীলতা যখন ঘাড়ে চলে আসবে সে নিজে নিজেই ক্যারিয়ার গঠনে আরো উঠে পড়ে চেষ্টা করবে। বিয়ে করে নিজের পায়ে দাঁড়ানোটা কোন প্রতিবন্ধকতাই নয়। বরং ভাল ক্যারিয়ার গড়ার ক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রী একে অপরের বিশ্বস্ত সহযোগী।
.
হয়ত ভার্সিটি লাইফ শেষে এখন থেকে ২/৩ বছর পরে আপনার ছেলে বিয়ের সামর্থ্য লাভ করবে, কিন্তু এখন যদি আপনারা সাহায্য করেন তাহলে এই নশ্বর জীবনে কিন্তু তার 'মহামুল্যবান ২-৩ বছর নষ্ট হবে না, তার দ্বীনও অর্ধেক পূরন হবে, সে আপনাদের প্রতি অনেক কৃতজ্ঞ থাকবে। পরবর্তীতে তার সন্তান লাভ, আপনাদের দাদা দাদী হওয়া, নাতিপুতিদেরও বিয়ে শাদী ইত্যাদি সব বিষয় গুলোই ২-৩ বছর এগিয়ে গেল ইনশাআল্লাহ।
.
আর যেখানে রিজিকের ব্যাপারে আল্লাহ ওয়াদা দিয়েছেন তবুও আপনাদের মন খুত খুত করে, সেক্ষেত্রে আরেকটা আইডিয়া আছে, বিয়ের পর ছেলে থাকল তার জায়গায়, বউ তার জায়গায়। দুইজনই আগের মত যেমন নিজের বাপের টাকায় চলছিল চলুক। বউ তার বাপের বাড়িতে কিংবা তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে।দুজনেই ব্যস্ত পড়ালেখা নিয়ে।
.
এইদিকে নিজেদের মাঝে চ্যাটিং, ফোনালাপ, পারস্পারিক যোগাযোগ, খোঁজ খবর রাখা, উভয়ে উভয়ের পরিবারের সাথে কানেক্টিং থাকা, বিভিন্ন বন্ধে দেখা' সাক্ষাৎ করা, এক সাথে ভ্রমণ, খাওয়া-দাওয়া করা, উপহার দেয়া, উদ্দীপনামূলক প্রতিযোগিতা, ঈদে বাসায় নিয়ে আসা, তার বাড়ীতে যাওয়া, সৎ পরামর্শ দেয়া, সুখ-দুঃখে অংশীদার হওয়া ইত্যাদি চলল লেখাপড়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত।
.
তবে হ্যাঁ এই রকম সিদ্ধান্তে ছেলে-মেয়েকে অবশ্যই পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, সেক্রিফাইসের মনোভাব ও অত্যধিক উচ্চাবিলাসী মনোভাব পরিহার করতে হবে দুই পরিবারেরই।
.
আর যদি এইসব কিছু্র কোনটাই কারন না হয়, নিছক সামাজিকতা রক্ষার দায় কিংবা মানুষ কী ভাববে সেটাি কারণ হয়, তাহলে প্রস্তুত থাকুন, আপনার সন্তান ফিতনায় পড়ুক, খারাপ কাজ করুক, অবৈধ যেকোন উপায়ে নিজের প্রয়োজন মেটাক, বা আপনাদের উপর তার মনে বিষন্নতা তৈরী হোক, আপনাদের ছেড়ে চলে যাক সে তো পাক্কা গুনাহগার হবে তবে এই গুনাহের শুরু করে দেওয়ার জন্য একটা অংশ নিতে আপনারাও প্রস্তুত থাকুন।
.
সে নিজেও জাহান্নামে তার জায়গা বানাবে আর আপনাদেরও টেনে নিয়ে যাবে।
..
তারপর আল্লাহ যেদিন আপনাদের পাকড়াও করবেন, প্রশ্ন করবেন, কিংবা ইহকালেই সন্তান রিলেটেড বড় কোন বিপদের সম্মুখীন হবেন, তখন আপনার কোন সমাজ আপনাকে রক্ষা করবে? আপনার হয়ে আল্লাহ তায়ালা কে উত্তর দেবার সাহস করবে? বিয়ের কথা বলার নির্লজ্জ্ব ভঙ্গিটা পাপ না,কিন্তু নির্লজ্জ্ব পথ তৈরি করে দেয়া, ঐ পথে হাটতে দেয়াটা পাপের।
.
'জন্ম - মানুষ কী ভাববে - মৃত্যু' — এইভাবেই জীবনটা পার করে দিয়েন না। আল্লাহ বুঝার তৌফিক দিন।
মহিউদ্দিন মুহাম্মদ
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন