জ্বিনরা কেমন, কি খায়, তাদের জীবন যাত্রা কি রকম তারা কোথায় থাকে এ বিষয় আমাদের কৌতুহাল সব সময় একটু বেশি। এ ব্যাপারে কুরআন ও হাদিসে বিশেষ ভাবে উল্লেখ্য আছে। জানা যায়, জ্বিন একটি প্রাণী। ইবলিস বা শয়তানও জ্বিনের অর্ন্তভুক্ত। তাদের কৃতকর্মের বিচার হবে। তাদের প্রকৃতি ও ক্ষমতা মানুষের থেকে ভিন্ন। তারা যেকোনো আকৃতি ধারণ করতে পারে। যা মানুষ পারে না। এ ধরণের ক্ষমতা দিয়েই তাদের সৃষ্টি করা হয়েছে। নিন্মে জ্বিনের আদ্যপান্ত তুলে ধরা হলো-
জ্বিন শব্দের অর্থ ও পরিচিতি:
জ্বিনজাতি মানুষের থেকে আলাদা এক সৃষ্টি। জ্বিন শব্দের অর্থ:
গুপ্ত, অদৃশ্য, লুক্কায়িত, আবৃত ইত্যাদি। জিন্নি একবচন আর জ্বিন বহুবচন।
জ্বিন কিসের তৈরি:
কুরআনুল কারীমে আল্লাহ সুবহানাহু তা‘আলা বলেন, আমি আদমের আগে জ্বিনকে সৃষ্টি করেছি ‘লু’-এর আগুন (অর্থাৎ ধোয়াবিহীন আগুনের শিখা) হতে। (সূরাহ আল-হিজর: আয়াত ২৭) (সূরা আর-রহমান: আয়াত ১৫) (সূরাহ আল-আ‘রাফ: আয়াত ১২)
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ফিরিশতাদের সৃষ্টি করা হয়েছে অনুপম জ্যোতি (নুর) দিয়ে, জ্বিনদের সৃষ্টি করা হয়েছে (মিম মা-রিজিম মিন নার) ধোয়াবিহীন আগুনের শিখা দিয়ে এবং আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করা হয়েছে তাই দিয়ে যার কথা (কুরআনুল কারীমে) তোমাদের বলা হয়েছে (অর্থাৎ মাটি)। (সহীহ মুসলিম, মিশকাতুল মাসাবিহ হা/৫৭০১)
জ্বিন জাতিকে কখন সৃষ্টি করা হয়েছে:
এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, জ্বিন জাতিকে মানুষের পূর্বেই সৃষ্টি করা হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, নিশ্চয়ই আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি কালো পচা শুষ্ক ঠনঠনে মাটি হতে। আর এর পূর্বে জ্বিনকে সৃষ্টি করেছি ধোয়াবিহীন আগুনের শিখা হতে। (সূরা হিজর, আয়াত ২৬-২৭)।
জ্বিনদের প্রকার ভেদ:
নবী (সা.) বলেছেন, জ্বিন তিন শ্রেণির। এক শ্রেণির ডানা আছে, তারা তার সাহায্যে বাতাসে উড়ে বেড়ায়, এক শ্রেণি সাপ-কুকুরের আকারে বসবাস করে, আর এক শ্রেণি স্থায়ীভাবে বসবাস করে ও ভ্রমণ করে। (ত্ববরানীর কাবীর, হা/৫৭৩; হাকেম, হা/৩৭০২, সহীহুল জামে লিল আলবানী, হা/৩১১৪)।
কোনো প্রাণী জ্বিনকে দেখতে পারে:
মানুষ সচরাচর জ্বিন দেখতে পায় না। কিন্তু কিছু জীব-জন্তু যেমন- গাধা ও কুকুর জ্বিন দেখতে পায়। নাবী (সা.) বলেছেন, ‘যখন তোমরা মোরগের ডাক শুনবে, তখন আল্লাহর নিকট তাঁর অনুগ্রহ প্রার্থনা কর। কারণ সে কোনো ফিরিশতা দেখেছে। আর যখন তোমরা গাধার ডাক শুনবে, তখন আল্লাহর নিকট শয়তান থেকে আশ্রয় প্রার্থনা কর। কারণ সে কোনো শয়তান দেখেছে।’ (সহীহুল বুখারী, হা/৩৩০৩ সহীহ মুসলিম, মাশা হা/৭০৯৬ মিশকাত, মাশা হা/১৪১৯)
অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘যখন তোমরা কুকুর ও গাধার ডাক শুনবে, তখন আল্লাহর নিকট (শয়তান থেকে) আশ্রয় প্রার্থনা কর। কারণ তারা তা দেখতে পায়, যা তোমরা দেখতে পাও না।’ (সুনানে আবু দাউদ, হা/৪২৫৬)।
জ্বিন ও ফিরিশতার মধ্যে পার্থক্য:
১. জ্বিন আগুনের সৃষ্টি, কিন্তু ফিরিশতা নুর থেকে সৃষ্টি।
২. জ্বিন পানাহার করে, কিন্তু ফিরিশতা পানাহার করেন না।
৩. জ্বিন পাপ-পুণ্য করে, কিন্তু ফিরিশতা কেবল পুণ্য করেন এবং সর্বদা মহান আলাহর ইবাদত ও আনুগত্য করেন। দুটিই অদৃশ্য জগৎ কিন্তু উভয় জগৎ ভিন্ন ভিন্ন।
শয়তান জ্বিন সম্প্রদায় ভুক্ত:
মহান আল্লাহ বলেন, (স্বরণ কর) আমি যখন ফিরিশতাদেরকে বলেছিলাম, তোমরা আদমকে সিজদা কর, তখন ইবলীস ছাড়া সবাই সিজদা করল, (কানা মিনাল জ্বিন) সে ছিল জ্বিনদের একজন। সে তার প্রতিপালকের আদেশ অমান্য করল। (সূরা কাহাফ, আয়াত: ৫০)।
শয়তানের আকৃতি:
শয়তানের আকৃত যেমন কুৎসিত তেমনি শক্তিতেও সে জ্বিনদের মধ্যে সবার চাইতে বেশী বলবান। উবাই বিন কাব (রা.) হতে বর্ণিত, তাঁর এক খেজুরের খামার ছিল। সেখানে হতে খেজুর কম হয়ে যাচ্ছিল। তাই এক রাত্রিতে তিনি পাহারা দিয়ে থাকলেন। হঠাৎ তিনি নব্য তরুণের ন্যায় এক জন্তু দেখতে পেলেন। তিনি তাকে সালাম দিলেন, সে তাঁর সালামের উত্তরও দিল। তিনি তার উদ্দেশ্যে বললেন, ‘কে তুমি? জ্বিন অথবা ইনসান?’ সে বলল, ‘আমি জ্বিন’। তিনি বললেন, কৈ তোমার হাতটা আমাকে দেখতে দাও। সে তার হাত দেখতে দিল। তার হাত ছিল কুকুরের পায়ের মত। তার দেহের লোমও ছিল কুকুরের মতো। তিনি সবিস্ময়ে প্রশ্ন করলেন, জ্বিনের সৃষ্টিগত আকৃতি কি এটাই? সে বলল, জ্বিনরা জানে যে তাদের মধ্যে আমার চেয়ে অধিক বলবান পুরুষ আর কেউ নেই। তিনি বললেন, এখানে কী জন্য এসেছ? সে বলল, আমরা খবর পেলাম যে, তুমি দান করতে ভালবাস। তাই তোমার খাদ্যভান্ডার হতে কিছু পাওয়ার উদ্দেশ্যে এসেছি। তিনি বললেন, ‘আচ্ছা তোমাদের অনিষ্ট থেকে বাঁচার উপায় কী? সে বলল, (উপায়) সূরা বাক্বারার এই আয়াত পাঠ (আল্লাহু লা ইলা-হা ইল্লাহ হুয়াল হাইয়্যূল কাইয়্যু,। যে ব্যক্তি সন্ধায় তা পাঠ করবে সে সকাল অবধি আমাদের অনিষ্ট থেকে নিরাপদে থাকবে। আর যে ব্যক্তি সকালে তা পাঠ করবে সে সন্ধ্যা পর্যন্ত আমাদের অনিষ্ট থেকে নিরাপদ থাকবে।
অতঃপর সকাল হলে তিনি আল্লাহর রাসূল (সা.)-এর নিকট এসে রাত্রের বৃত্তান্ত উল্লেখ করলেন। তা শুনে তিনি বললেন, ‘খবীস সত্যই বলেছে’।(সুনান আন নাসাঈ, ত্বাবারাণী, সহীহ তারগীব, হা/৬৬২)।
জ্বিনদের খাবার ও পানীয়:
জ্বিনেরা খাবার খায়। রাসূল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমাদের মধ্যে যখন কেউ আহার করে তখন যেন ডান হাত দিয়ে আহার করে এবং পান করার সময় যেন ডান হাত দিয়েই পান করে- কেননা শয়তান আহার করে বাম হাতে ও পানাহার করে বাম হাতে (সহীহ মুসলিম, হা/১০৫, ৩৭৬৪)।
একবার নবী (সা.) আবু হুরাইরা (রা.)-কে পবিত্রতা অর্জনের জন্য ঢেলা আনতে বললেন এবং হাড় ও শুকনো গোবর আনতে নিষেধ করলেন। কারণ জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, ‘এ দুটি জ্বিনদের খাদ্য’। (সহীহুল বুখারী, তাও হা/৩৮৬০)
অন্যত্র তিনি (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা গোবর বা হাড় দ্বারা পেশাব-পায়খানা পরিস্কার করো না, কারণ তা তোমাদের জ্বিন ভাইদের খাদ্য’ (সহীহ আত-তিরমিযী, হা/১৮)
আল্লাহর নাম নিয়ে (বিসমিল্লাহ অথবা সালাম দিয়ে) গৃহে প্রবেশ করলে সে ঘরে শয়তান ও তার অনুচরেরা প্রবেশ করতে পারে না। বিসমিল্লাহ বলে খাবার গ্রহণ করলে সে খাবারে শয়তান ও তার অনুচরের কোন অংশ থাকে না। (সহীহ মুসলিম, হা/৫৩৮১)
হুযাইফা (রা.) বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে যখন আমরা কোনও খানার মজলিসে হাজির থাকতাম তখন তিনি (সা.) শুরু না করা পর্যন্ত আমরা কেউ-ই খাবারে হাত দিতাম না। একবারের ঘটনা। আমরা (রাসূলুলাহ সা. এর সঙ্গে) খাওয়ার মজলিসে হাযির আছি। এমন সময় এক বেদুইন এল। যেন তাকে কেউ খাবারের দিকে তাড়িয়ে এনেছে। সে এসেই খাবারের দিকে হাত বাড়াল। রাসূলুলাহ (সা.) তার হাত ধরে ফেললেন এবং তাকে বসিয়ে দিলেন। তারপর একটি মেয়ে (বালিকা) এল, তাকেও যেন হাঁকিয়ে আনা হলো। মেয়েটি এসে খাবরের পাত্রে হাত দিতে উদ্যত হলো। রাসূলুল্লাহ (সা.) তারও হাত ধরে ফেললেন। অতপর তিনি (সা.) বললেন, যে খাবারে আল্লাহর নাম নেওয়া হয় না, শয়তান তা নিজের জন্য হালাল করে নেয়। শয়তান এই বেদুঈনের সাথে খেতে এসেছিল। আমি তার হাত ধরে ফেললাম। তাই সে (শয়তান) ফের এই মেয়েটির সাথে এল এবং এর মাধ্যমে খাবারে ভাগ বসাতে চাইলে। এর হাতও আমি ধরে ফেললাম। যার হাতে আমার জীবন সেই সত্তার কসম! এই দুজনের হাতের সাথে শয়তানের হাতও আমার মুঠোর মধ্যে (সুনানে আবু দাউদ, হা/৩৭৬৬)
জ্বিনদের বিবাহ ও বংশবৃদ্ধি:
জ্বিনদের মধ্যে বিবাহ-শাদী ও বংশবৃদ্ধি হয়ে থাকে। শয়তানের বংশধর আছে। মহান আল্লাহ বলেছেন,‘(স্মরণ কর) আমি যখন ফিরিশতাদেরকে বলেছিলাম, তোমরা আদমকে সিজদা কর, তখন ইবলিশ ছাড়া সবাই সিজদা করলো। (কানা মিনাল জ্বিন) সে ছিল জ্বিনদের একজন। সে তার প্রতিপালকের আদেশ অমান্য করল, তবে কি তোমরা আমার পরিবর্তে তাকে ও তার বংশধরকে (জুররিয়াতাহু) অভিভাবকরূপে গ্রহণ করবে, অথচ তারা তোমাদের শত্রু? সীমালংঘনকারীদের পরিনাম কত নিকৃষ্ট। (সূরা আল-কাহাফ, আয়াত: ৫০)
জ্বিন-ইনসানের আপোসে মিলন কি সম্ভব? এ ব্যাপারে আলেমদের মধ্যে এখতেলাফ রয়েছে। ইমাম সুয়ূতী, ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রহ.) সহ আরোও অনেকে জ্বিন-ইনসানের মাঝে বিবাহ ও মিলন ঘটতে পারে বলে মত প্রকাশ করেছেন। পক্ষান্তরে অন্য কিছু উলামা বলেন, জ্বিন-ইনসানের মাঝে বিবাহ ও মিলন সম্ভব নয়। যেহেতু মহান আল্লাহ মানুষের নিজেদের মধ্য থেকে সঙ্গিনী সৃষ্টি করে অনুগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে আর একটি নিদর্শন এই যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য হতেই তোমাদের সঙ্গিনীদেরকে সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা ওদের নিকট শান্তি পাও এবং তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক ভালবাস ও মায়া-মমতা সৃষ্টি করেছেন। চিন্তাশীল সম্পদায়ের জন্য এতে অবশ্যই বহু নিদর্শন রয়েছে। (সূরা আর রূম, আয়াত: ২১)
জ্বিনদের বয়স ও মৃত্য:
এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, জ্বিন ও শয়তানের মৃত্যু আছে। মহান আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা সূরা আর-রহমানের ২৬-২৭ নম্বর আয়াতে বলেন: (কুল্লু মান ‘আলাইহা ফান) ‘ভূ-পৃষ্ঠে যা কিছু আছে সবই নশ্বর। অবিনশ্বর শুধু তোমার মহিমময়, মহানুভব প্রতিপালকের মুখমন্ডল বা সত্তা’
তাদের গড় আয়ু কত, সে বিষয়ে কোন তথ্য জানা নেই। তবে জ্বিনের একটি অংশ বা ইবলিশ সম্বন্ধে মহান আল্লাহ আমাদেরকে জানিয়েছেন, সে কিয়ামত অবধি জীবিত থাকবে। (সূরা আরাফ, আয়াত: ১৪; সূরা আল হিজর, আয়াত: ৩৬; সূরা সোয়াদ, আয়াত: ৭৯; সূরা আল আরাফ, আয়াত: ১৫)
তারা যে মরে এবং তাদের হত্যা করা যায়, তার প্রমাণ খালেদ বিন অলীদ (রা.) উযযার শয়তানকে হত্যা করেছেন এবং মদীনার এক সাহাবী সাপরূপী এক জ্বিনকে হত্যা করেছেন।
জ্বিন ও শয়তানের বাসা:
সহীহ হাদীসে আছে, শয়তান কোথাও বিশ্রাম নেয়। অতঃপর অন্ধকার ছেয়ে এলে তারা ছড়িয়ে পড়ে। এই জন্য নাবী (সা.) সেই সময় শিশুদেরকে ঘরের বাইরে যেতে দিতে নিষেধ করেছেন। (সহীহুল বুখারী, তাও হা/৩২৮০) শয়তান আযান শুনে পলায়ন করে। শয়তানদেরকে রামাদ্বান মাসে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়।
অর্ধেক শরীর রোদে ও অর্ধেক ছায়াতে রেখে বসতে শয়তান ভালবাসে। এই জন্য নাবী (সা.) আমাদেরকে অনুরূপ বসতে নিষেধ করেছেন। (মুসনাদে আহমদ, সিলসিলা সহীহা, হা/৮৩৮)
এমন পশু যার সাথে শয়তান থাকে:
হাদীসে এসেছে ‘কালো কুকুর শয়তান’ অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে ‘উট শয়তানী উপাদান থেকে সৃষ্ট’ (সহীহ মুসলিম, হা/২৬৫, সুনানে আবু দাউদ, সুনান আত-তিরমিযী, সুনান আন-নাসাঈ, সুনানে ইবনে মাযাহ; সহীহা, হা/১৫৭৯)
জ্বিন জাতীর ক্ষমতা ও অক্ষমতা:
১. জ্বিনদের মহাকাশ অভিযান:
শয়তান জ্বিনেরা মহাকাশে আরোহণ করে আসমানী খবর চুরি করে শুনতে চায়। যাতে তারা ঘটনা ঘটার পূর্বে জানতে পারে। কিন্তু সর্বশেষ নবী প্রেরিত হওয়ার পর মহাকাশের নিরাপত্তা সুদৃঢ় করা হয়। তাদের বিশ্বাসী এক দলের কথা- ‘আমরা আকাশ পর্যবেক্ষণ করে দেখেছি, কঠোর প্রহরী ও উল্বাপিন্ড দ্বারা তা পরিপূর্ণ। আর পূর্বে আমরা আকাশের বিভিন্ন ঘাঁটিতে (সংবাদ) শুনবার জন্য বসতাম, কিন্তু এখন কেউ (সংবাদ) শুনতে চাইলে, সে তার উপর নিক্ষেপের জন্য প্রস্তুত জ্বলন্ত উল্কাপিন্ডের সম্মুখিন হয়। (সূরা জ্বিন- ৭২: ৮-৯)
কিছু শয়তান সেই খবর পৃথিবীতে তাদের সহচর গণকদের মনে পৌঁছে দেয়। গণকরা তাদের অনুমান ও ধারণার আরো শত মিথ্যা জুড়ে বিশদভাবে প্রচার করে। ফলে যা সত্য তা সত্য ঘটে, কিছু আন্দাজও সঠিক হয়ে যায় এবং অধিকতরই মিথ্যা ও অবাস্তব। (সহীহুল বুখারী, তাও হা/৪৭০১; সহীহ মুসলিম, হা/৫৯৫৫; এরুপ বর্ণনা আরো পাবেন সহীহুল বুখারী, তাও হা/৫৭৬২; ৩২১০)
মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘আকাশে আমি গ্রহ-নক্ষত্র সৃষ্টি করেছি এবং ওকে করেছি দর্শকদের জন্য সুশোভিত। প্রত্যেক অভিশপ্ত শয়তান হতে আমি ওকে নিরাপদ রেখেছি। আর কেউ চুরি করে সংবাদ শুনতে চাইলে ওর পেছনে ছুটে প্রদীপ্ত আগ্নিশিখা (উল্কা)। (সূরা আল হিজর- ১৫: ১৬-১৮)
২. জ্বিনদের শিল্পজ্ঞান:
এ ব্যাপারে বহু যুগ পূর্বে নবী সুলাইমান (আ.)-এর নির্দেশে জ্বিনেরা বহু শিল্পকর্ম প্রদর্শন করেছে। (সূরা সাবা- ৩৪: ১২-১৩)
৩. জ্বিনদের স্বেচ্ছারূপ ধারণ করার ক্ষমতা:
জ্বিনেরা স্বেচ্ছামতো রূপ ধারণ করার ক্ষমতা রাখে। কখনো মানুষ, আবার কখনো কোন জীব-জন্তুর আকারে মানুষের কাছে আবির্ভূত হয়। বদরের দিন শয়তান সুরাকা বিন মালেকের রূপ ধারণ করে মুশরিকদের নিকট এসেছিল এবং বিজয়ের সুসংবাদ শুনিয়েছিল। অতঃপর যুদ্ধ শুরু হল এবং অবতীর্ণ ফিরিশতা দেখতে পেলে সে পালিয়ে যায়। মহান আল্লাহ সে কথা কুরআনে বলেছেন, “স্মরণ কর, শয়তান তাদের কার্যাবলীকে তাদের দৃষ্টিতে সুশোভিত করেছিল এবং বলেছিল, আজ মানুষের মধ্যে কেউই তোমাদের উপর বিজয়ী হবে না, আর আমি অবশ্যই তোমাদের সহযোগী (প্রতিবেশী)। অতঃপর দু‘দল যখন পরম্পরের সম্মুখীন হল, তখন সে পিছু হটে সরে পড়ল ও বলল, নিশ্চয় তোমাদের সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই। নিশ্চয় আমি তা দেখি, যা তোমরা দেখতে পাও না। নিশ্চয় আমি আলাহকে ভয় করি। আর আল্লাহ শাস্তি দানে কঠোর। {সূরা আল আনফাল- ৮: ৪৮}
৪. ‘কালো কুকুর শয়তান’ (সহীহ মুসলিম, মাশা হা/১১৬৫)
৫.গৃহবাসী সাপ জ্বিন:
জ্বিন কখনো কখনো সাপের আকৃতি ধারণ করে মানুষেন বাসায় বসবাস করে। এ জন্য নবী (সা.) বাড়ির ভিতর তাড়াহুড়া করে সাপ হত্যা করতে নিষেধ করেছন। যাতে কোন মুসলিম জ্বিন অকারণে মারা না যায়। তিনি (সা.) বলেছেন, ‘অবশ্যই মদীনায় কিছু জ্বিন আছে, যারা মুসলমান হয়েছে। সুতরাং তাদের কাউকে (সাপ আকারে) দেখলে তাকে তিন বার সর্তক কর। অতঃপর উচিত মনে হলে তাকে হত্যা কর। কারণ সে শয়তান। (সহীহ মুসলিম, হা/৫৯৭৬)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন